রাস্তার ধারে কোন গাছ লাগানো ভালো।
জমিনের পাশে রাস্তায় পাম জাতীয় গাছ নাকি বনজ গাছ লাগানো ভালো?
জমির একেবারে পাশে রাস্তা থাকলে সেখানে কোন গাছ লাগালে জমি, রাস্তা, ফসল ও মানুষের ক্ষতি না হয়—এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সাধারণত দুই ধরনের গাছ নিয়ে আলোচনা হয়: পাম জাতীয় গাছ (নারিকেল, খেজুর, সুপারি) এবং বনজ গাছ (মহগনি, সেগুন, রেইনট্রি ইত্যাদি)। নিচে দু’ধরনের গাছের বিস্তৃত তুলনা দেওয়া হলো।
পাম জাতীয় গাছ (নারিকেল, খেজুর, সুপারি) – বিস্তারিত সুবিধা
- ১. শিকড় নিচের দিকে বৃদ্ধি পায়: পাম জাতীয় গাছের শিকড় গভীর ও নিচে যায়, পাশের জমির দিকে বেশি ছড়ায় না। ফলে ফসলি জমির পানি, সার বা পুষ্টির সাথে প্রতিযোগিতা করে না।
- ২. পাশের জমির ক্ষতি হয় না: শিকড় মাটির উপরিভাগ দখল না করায় জমির মাটি শক্ত হয় না এবং চাষাবাদ বাধাগ্রস্ত হয় না।
- ৩. ছায়া খুব কম ফেলে: নারিকেল বা সুপারি গাছ লম্বা হয় কিন্তু ডালপালা কম। ফলে রোদ ঢেকে যায় না এবং পাশে ফসলের উৎপাদন কমে না।
- ৪. ঝড়ে ভেঙে পড়ার ঝুঁকি কম: পাম জাতীয় গাছ বাতাসে দুলে যায়, কিন্তু অন্য গাছের মতো বড় ডাল ভেঙে পড়ে না।
- ৫. অর্থনৈতিক সুবিধা বেশি: নারিকেল, সুপারি, খেজুর থেকে প্রতি বছর নিয়মিত আয় পাওয়া যায়। রাস্তার ধারের ফাঁকা জায়গার সর্বোত্তম ব্যবহার।
- ৬. রক্ষণাবেক্ষণ কম লাগে: পানি, সার এবং পরিচর্যা খুব কম লাগে। রোগবালাইও তুলনামূলক কম।
পাম জাতীয় গাছের অসুবিধা
- ১. ফল পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে: নারিকেল পড়ে গেলে রাস্তার মানুষ বা যানবাহনের ক্ষতি হতে পারে। তবে নিয়মিত সংগ্রহ করলে সমস্যা থাকে না।
- ২. লম্বা হওয়ায় ঝড়ে উপড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে: বিশেষ করে পুরোনো বা দুর্বল গাছের ক্ষেত্রে।
- ৩. আলো কিছু ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হতে পারে: সুপারি সারি করে খুব ঘন লাগালে রাস্তার দিকের আলো কমে যেতে পারে।
বনজ গাছ (মহগনি, রেইনট্রি, সেগুন) – বিস্তারিত সুবিধা
- ১. দ্রুত বৃদ্ধি: মহগনি, রেইনট্রি, আকাশমণি খুব দ্রুত বড় আকার ধারণ করে।
- ২. কাঠের উচ্চ মূল্য: ভবিষ্যতে বড় অঙ্কের টাকায় কাঠ বিক্রি করা যায়।
- ৩. রাস্তার আকর্ষণ বৃদ্ধি: ছায়া ও সবুজায়ন বাড়ায়, পরিবেশ সুন্দর রাখে।
- ৪. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: বড় গাছ এলাকায় তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
বনজ গাছের অসুবিধা — বিস্তারিত
- ১. শিকড় দূরে দূরে ছড়ায়: এই গাছের শিকড় জমির পানি ও সার টেনে নেয়, ফলে ধানের জমি বা সবজি জমিতে উৎপাদন কমে যায়।
- ২. বড় ছায়া ফেলে: ছায়ার কারণে পাশে রোদ না পৌঁছালে অনেক ফসল ঠিকমতো হয় না।
- ৩. ঝড়ে ডাল ভেঙে পড়ে: বড় ডাল রাস্তা বা জমিতে পড়ে বিপদ ঘটাতে পারে।
- ৪. রক্ষণাবেক্ষণ বেশি: সময়মতো ছাঁটাই না করলে গাছ বেঁকে যায়, ডাল ভারী হয়ে পড়ে।
- ৫. রাস্তা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি: বড় শিকড় রাস্তার বাঁকানো পিচ উঠে যেতে পারে।
দূরত্ব অনুযায়ী কোন গাছ লাগাবেন?
- ১–৩ ফুট দূরত্ব: শুধু পাম জাতীয় গাছ (নারিকেল/সুপারি/খেজুর)।
- ৩–৭ ফুট দূরত্ব: পাম জাতীয় গাছ সবচেয়ে নিরাপদ।
- ৮–১০ ফুট বা তার বেশি দূরত্ব: বনজ গাছ লাগানো যেতে পারে (মহগনি, রেইনট্রি)।
- ১৫ ফুটের বেশি হলে: সব ধরনের বড় গাছ লাগানো যায়।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত — কোনটি সেরা?
রাস্তার একেবারে পাশের জমিতে গাছ লাগাতে হলে—পাম জাতীয় গাছই সেরা।
কারণ:
- শিকড় পাশের জমিতে ঢোকে না
- ছায়া কম ফেলে
- ফসলের ক্ষতি করে না
- ঝড়ে ভাঙার ঝুঁকি কম
- নিয়মিত আয় পাওয়া যায়
রাস্তা থেকে ৮–১৫ ফুট দূরত্ব থাকলে বনজ গাছও লাগানো যায়।
সেরা প্রস্তাবিত গাছের তালিকা
- নারিকেল: রাস্তার পাশে লাগানোর জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
- সুপারি: সারি করে লাগালে সৌন্দর্য বাড়ে, আয়ের উৎস।
- খেজুর: রাস্তায় কম ছায়া ফেলায় উপযোগী।
- মহগনি: রাস্তা থেকে দূরে লাগাতে হবে।
- রেইনট্রি: বড় জমির পাশে ভালো, কিন্তু রাস্তার বুকে নয়।
