ডিলারশিপ মৌলিক ধারণা । Fundamentals of Dealership
ডিলারশিপ মৌলিক ধারণা
১. ডিলারশিপ কি এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ
ডিলারশিপ হলো একটি ব্যবসা যেখানে একজন ব্যবসায়ী কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানি বা ব্র্যান্ডের পণ্য বা সেবা বিক্রির জন্য অনুমোদন পান। ডিলার কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে, পণ্য পাইকারি দরে কিনে খুচরা বা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি কোম্পানির ডিলারশিপ নেওয়া মানে তাদের পণ্যের বিপণন, বিতরণ এবং বিক্রির দায়িত্ব নেওয়া। [2]
ডিলারশিপের গুরুত্ব:
- ডিলাররা উৎপাদক এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে।
- ব্র্যান্ডের সুবিধা যেমন মার্কেটিং সাপোর্ট, প্রশিক্ষণ এবং একচেটিয়া বিক্রির অধিকার পাওয়া যায়। [0]
- পরিচিত ব্র্যান্ডের ডিলারশিপে মার্কেটিং খরচ কম এবং ব্যবসা দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হয়।
- কোম্পানির জন্য পণ্য বিতরণ সহজ এবং বাজার প্রসার ঘটে। [3]
এটি ঝুঁকি কম এবং লাভের সুযোগ বেশি প্রদান করে, বিশেষ করে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য।
২. ডিলারশিপ ব্যবসার ধরন
ডিলারশিপ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যা পণ্য বা সেবার উপর নির্ভর করে। সাধারণত দুই প্রকার: প্রত্যক্ষ (ডিরেক্ট) এবং পরোক্ষ (ইনডিরেক্ট)। প্রত্যক্ষ ডিলাররা উৎপাদকের কাছ থেকে পণ্য কিনে সরাসরি ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করে। পরোক্ষ ডিলাররা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে। [24]
জনপ্রিয় ধরন:
- খাদ্যপণ্য ডিলারশিপ: বিস্কুট, চিপস, তেল ইত্যাদি, যেমন পার্লে বা মেঘনা গ্রুপ। [19]
- প্রসাধনী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য: সাবান, শ্যাম্পু ইত্যাদি।
- ইলেকট্রনিক্স ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স: যমুনা বা ওয়ালটনের পণ্য। [21]
- অটোমোবাইল ও যান্ত্রিক পণ্য: মোটরসাইকেল, ট্রাক্টর বা লুব্রিকেন্ট।
- কৃষি সংশ্লিষ্ট: সার, বীজ, কীটনাশক।
- অন্যান্য: স্টেশনারি, ফার্নিচার বা ফুড প্রোডাক্ট। [22]
এগুলো কম পুঁজিতে শুরু করা যায় এবং স্থানীয় চাহিদা অনুসারে নির্বাচন করতে হয়।
৩. ডিলারশিপ মডেল: একক বনাম মাল্টিপল ডিলার
ডিলারশিপ মডেল দুই ধরনের: একক এবং মাল্টিপল।
- একক ডিলার মডেল: একটি নির্দিষ্ট এলাকায় শুধুমাত্র একজন ডিলারকে অনুমোদন দেওয়া হয়।
- সুবিধা: কম প্রতিযোগিতা, উচ্চ লাভ, ব্র্যান্ডের সাথে গভীর সম্পর্ক।
- অসুবিধা: বেশি বিনিয়োগ, ধীর প্রসার।
- উদাহরণ: হিরো বা টিভিএস অটোমোবাইল। [10]
- মাল্টিপল ডিলার মডেল: একই এলাকায় একাধিক ডিলার নিয়োগ করা হয়।
- সুবিধা: দ্রুত প্রসার, বেশি বিক্রি, কম বিনিয়োগ।
- অসুবিধা: প্রতিযোগিতার কারণে লাভ কম, ব্র্যান্ড লয়ালটি কম।
- উদাহরণ: পার্লে বা ইউনিলিভার পণ্য। [11]
মডেল নির্বাচনে বাজারের চাহিদা, বিনিয়োগ ক্ষমতা এবং কোম্পানির নীতি বিবেচনা করুন।
৪. ডিলারশিপ ব্যবসার প্রাথমিক ধাপ
ডিলারশিপ শুরুর ধাপগুলো:
- বাজার গবেষণা: এলাকার চাহিদা, প্রতিযোগিতা এবং সম্ভাব্য পণ্য যাচাই। [80]
- কোম্পানি নির্বাচন: বিশ্বস্ত কোম্পানির পণ্য গুণমান, সরবরাহ ব্যবস্থা যাচাই। [32]
- আবেদন ও চুক্তি: কোম্পানিতে আবেদন এবং চুক্তি সই। [30]
- বিনিয়োগ ও অবকাঠামো: সিকিউরিটি মানি, গোডাউন, লাইসেন্স সংগ্রহ।
- পণ্য সংগ্রহ ও বিক্রি: পণ্য কিনে স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ীদের সরবরাহ। [28]
- মার্কেটিং: কোম্পানির সাপোর্টে প্রচার এবং গ্রাহক সম্পর্ক গড়া।
৫. ডিলারশিপ লাইসেন্স ও অনুমোদন প্রক্রিয়া
বাংলাদেশে লাইসেন্স প্রক্রিয়া:
- ট্রেড লাইসেন্স: সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা থেকে। খরচ ৫০০-৫০০০ টাকা। [92]
- টিসিবি/বিএডিসি: সার, বীজের জন্য অনলাইন আবেদন, ১৫ দিনে অনুমোদন। [93]
- ভ্যাট নিবন্ধন: টার্নওভার ৩০ লাখ টাকা হলে NBR থেকে।
ভারতে:
- GST রেজিস্ট্রেশন: টার্নওভার ২০ লাখ টাকা হলে। [89]
- শপ অ্যান্ড এস্টাবলিশমেন্ট: রাজ্যভিত্তিক।
স্থানীয় আইন মেনে আইনি সহায়তা নিন।
৬. ডিলারশিপের জন্য প্রয়োজনীয় নথি ও কাগজপত্র
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা পাসপোর্টের কপি।
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং পরিচিতি ভিডিও। [12]
- ট্রেড লাইসেন্সের কপি।
- দোকান/গোডাউনের ভাড়ার দলিল বা মালিকানা প্রমাণ।
- ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট।
- ভ্যাট নিবন্ধন সনদ (যদি প্রযোজ্য)।
- টিসিবি: আবেদন ফি, ট্রাকের কাগজ। [43, 91]
৭. ডিলারশিপ ব্যবসায় ঝুঁকি ও সুযোগ
সুযোগ:
- কম ঝুঁকি, কোম্পানির প্রশিক্ষণ ও মার্কেটিং সাপোর্ট। [48]
- লাখে ১০% লাভ, কম প্রতিযোগিতা, মাসিক ১-১.৫ লাখ টাকা আয়। [49]
- ব্র্যান্ডের খ্যাতি ব্যবহারে দ্রুত গ্রাহক আকর্ষণ।
ঝুঁকি:
- প্রতারণার ঝুঁকি, পণ্য গুণমান খারাপ হলে ক্ষতি। [47]
- বাজার অনিশ্চয়তা, প্রতিযোগিতায় লাভ কম। [54]
- আইনি বিরোধ বা চুক্তি লঙ্ঘনে ডিলারশিপ বাতিল।
৮. ডিলারশিপ ব্যবসার ROI কিভাবে হিসাব করবেন
ROI = (নিট লাভ / মোট বিনিয়োগ) × ১০০। [71]
ধাপ:
- নিট লাভ: মোট আয় থেকে খরচ বাদ দিন।
- মোট বিনিয়োগ: সিকিউরিটি, দোকান স্থাপন, পণ্য ক্রয়।
- উদাহরণ: ১০ লাখ বিনিয়োগে ২ লাখ লাভ হলে ROI = ২০%।
- এক্সেল বা সফটওয়্যার ব্যবহার করুন। [67]
সাধারণত ROI ১০-২০% হয়।
৯. ব্র্যান্ড পার্টনারশিপের গুরুত্ব
ব্র্যান্ড পার্টনারশিপ সফলতার মূল চাবিকাঠি। [64]
- খ্যাতি: পরিচিত ব্র্যান্ডে মার্কেটিং খরচ কম। [57]
- সাপোর্ট: প্রশিক্ষণ, প্রমোশনাল ম্যাটেরিয়াল।
- লাভজনকতা: চাহিদা বাড়লে বিক্রি বৃদ্ধি।
- প্রসার: নতুন পণ্য লঞ্চের সুযোগ। [65]
১০. স্থানীয় বাজারে ডিলারশিপ প্রতিষ্ঠার কৌশল
- বাজার যাচাই: চাহিদা, প্রতিযোগিতা, ভালো লোকেশন। [82]
- কোম্পানি যাচাই: পণ্য গুণমান, সরবরাহ। [83]
- প্রমোশন: স্থানীয় বিজ্ঞাপন, সোশ্যাল মিডিয়া।
- নেটওয়ার্ক: খুচরা দোকানদারদের সাথে সম্পর্ক। [76]
- ব্যবস্থাপনা: হিসাব, কর্মী নিয়োগ, স্টক।
- প্রসার: ছোট থেকে শুরু, লাভে সম্প্রসারণ। [84]
