Articles of Association (AoA) কি কি থাকে?
Articles of Association (AoA) — কি কি থাকে?
Articles of Association হলো কোম্পানির অভ্যন্তরীণ সংবিধান; এটি কোম্পানির পরিচালনা, শেয়ারহোল্ডার ও পরিচালকের অধিকার-দায়িত্ব এবং কার্যপ্রণালী নির্ধারণ করে। নীচে AoA–তে সাধারণত থাকা প্রত্যেকটি বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হলো।
১. কোম্পানির নাম ও রেজিস্টার্ড অফিস
- কোম্পানির পূর্ণ অফিসিয়াল নাম (Private Ltd. / Public Ltd. ইত্যাদি উল্লেখসহ)।
- রেজিস্টার্ড অফিসের ঠিকানা।
- রেজিস্টার্ড অফিস স্থানান্তরের নীতি ও সংশ্লিষ্ট নোটিশ প্রক্রিয়া।
২. কোম্পানির উদ্দেশ্য (Objects Clause)
- মূল বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ও ব্যবসার ধরণ।
- সহায়ক বা পরোক্ষ কার্যকলাপ যা মূল উদ্দেশ্য সমর্থন করে (যেমন: প্রশিক্ষণ, গবেষণা)।
- আইনগতভাবে নিষিদ্ধ কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার প্রতিশ্রুতি।
৩. অনুমোদিত ও ইস্যুকৃত শেয়ার ক্যাপিটাল
- Authorized Share Capital এবং তার শ্রেণি (Ordinary, Preference ইত্যাদি)।
- Issued, Paid-up ও Unpaid শেয়ারের বিবরণ।
- শেয়ারের পরিবর্তন, বন্টন বা রিডিমশন সম্পর্কিত বিধান।
৪. শেয়ারের ধরন ও শেয়ারহোল্ডারের অধিকার
- Ordinary Shares এবং Preference Shares-এর অধিকার ও সুবিধা।
- ভোটাধিকার, লভ্যাংশ গ্রহণ ও সম্পদ বণ্টনে অংশগ্রহণ সম্পর্কিত নিয়ম।
- শেয়ার ট্রান্সফার, ট্রান্সমিশন (মৃত্যু/উত্তরাধিকার) ও ফরফেইচারের বিধান।
৫. সদস্যপদ (Membership)
- সদস্য হওয়ার যোগ্যতা এবং সদস্য সংখ্যা সীমা (প্রাইভেট কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সীমা)।
- সদস্যপদ গ্রহণ/বাতিলের শর্ত এবং সদস্যের দায়-দায়িত্ব।
- সদস্যদের নোটিস ও যোগাযোগ পদ্ধতি।
৬. সাধারণ সভা (General Meetings)
- বার্ষিক সাধারণ সভা (AGM) ও বিশেষ সাধারণ সভা (EGM) আহ্বান করার নিয়ম।
- নোটিস পিরিয়ড, এজেন্ডা প্রচার ও কাগজপত্র প্রকাশের বাধ্যবাধকতা।
- সভায় কোরাম, সিদ্ধান্ত গ্রহণ পদ্ধতি (Simple / Special Resolution) এবং ভোটিং মেকানিਜ਼ম (Show of Hands / Poll)।
৭. পরিচালনা পর্ষদ (Board of Directors)
- পরিচালকদের সংখ্যা, নিয়োগ এবং তাদের যোগ্যতার মানদণ্ড।
- পরিচালকের মেয়াদ, পুনর্নিয়োগ ও অপসারণের প্রক্রিয়া।
- পরিচালকদের দায়িত্ব, কর্তৃত্ব এবং সীমাবদ্ধতা।
- পরিচালকদের সম্মানী, ভাতা ও সুবিধাসমূহ নির্ধারণের বিধান।
৮. বোর্ড মিটিং ও কার্যপ্রণালী
- বোর্ড মিটিং আহ্বান করার নিয়ম, নোটিস পিরিয়ড এবং মিটিং-এর ফ্রিকোয়েন্সি।
- কোরাম নির্ধারণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগুরু।
- ম্যানি-মিনিটস (Minutes) রক্ষার বাধ্যবাধকতা ও রেকর্ড সংরক্ষণ।
- ইন্টারেস্ট সংক্রান্ত দর্শকতা (Conflict of Interest) এবং সতর্কতা বিধান।
৯. লভ্যাংশ (Dividends) ও রিজার্ভ
- লভ্যাংশ ঘোষণা ও প্রদানের পদ্ধতি।
- রিজার্ভ তৈরি, রিটারেনড আর্নিংস এবং বোনাস ইস্যুর নিয়ম।
- লভ্যাংশ আদায়ের সময়সীমা এবং দাবি-পত্রের বিধান।
১০. ঋণ গ্রহণ, গ্যারান্টি ও চার্জ
- কোম্পানি কতটুকু ঋণ গ্রহণ করতে পারবে এবং বোর্ড অনুমোদন।
- ব্যাংক/তৃতীয় পক্ষের প্রতি গ্যারান্টি প্রদান ও সিকিউরিটি স্থাপন (Mortgage/Charge)।
- ঋণ সীমা অতিক্রম হলে শেয়ারের সংস্থান বা সদস্যদের স্বীকৃতি।
১১. একাউন্টস, বালান্স শিট ও অডিট
- হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি, আর্থিক বছরের সময়সীমা ও বিলম্বিত রেকর্ড সংরক্ষণের নিয়ম।
- অডিটর নিয়োগ, অডিট রিপোর্ট ও অডিটরদের ক্ষমতা।
- শেয়ারহোল্ডারদের জন্য আর্থিক বিবরণী প্রকাশ ও AGM-এ উপস্থাপন।
১২. লিকুইডেশন ও উইন্ডিং-আপ
- স্বেচ্ছায় বা আদালতের আদেশে লিকুইডেশনের প্রক্রিয়া।
- লিকুইডেটর নিয়োগ ও সম্পদের বণ্টন পদ্ধতি।
- ঋণ ও দায় পরিশোধের পরে অবশিষ্ট সম্পদ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বণ্টন।
১৩. সংশোধনী (Alteration of Articles)
- Articles পরিবর্তন বা সংশোধন করার জন্য Special Resolution-এর প্রয়োজনীয়তা।
- পরিবর্তন পরবর্তী Registrar/প্রাসঙ্গিক কর্তৃপক্ষের নথিভুক্তিকরণ।
১৪. বিতর্ক নিরসন ও আদালত/মধ্যস্থতা
- কোম্পানি অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিষ্পত্তির পদ্ধতি—মধ্যস্থতা (Mediation) বা সালিশ (Arbitration)।
- কোন আদালতে মামলা করা হবে (Jurisdiction), আইন প্রযোজ্যতা ও ভাষা নির্ধারণ।
১৫. সীল (Common Seal) ও নোটিস প্রসব
- কোম্পানির সীল ব্যবহার করার নিয়ম (যদি প্রযোজ্য)।
- নোটিস, চিঠি ও ইলেকট্রনিক নোটিফিকেশনের গ্রহণযোগ্যতা এবং জমার সময়সীমা।
১৬. গোপনীয়তা, ডেটা ও কনফিডেনশিয়ালিটি
- কোম্পানির বাণিজ্যিক গোপনীয়তা রক্ষা সংক্রান্ত ধারা।
- শেয়ারহোল্ডার ও কর্পোরেট ডেটা ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা।
১৭. সংঘটিত বিশেষ ধারা
কোনো নির্দিষ্ট শিল্প বা ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত ধারা (যেমন তথ্যপ্রযুক্তি, ব্যাংকিং, রপ্তানি–আমদানি, ফার্মাসিউটিক্যাল) রেখে দেয়া হয়, যাতে স্টেকহোল্ডারদের দৃষ্টান্ত স্পষ্ট থাকে।
১৮. MoA ও AoA-এর সম্পর্ক
- Memorandum of Association (MoA) কোম্পানির বাহ্যিক সীমা নির্ধারণ করে (ইতস্তত উদ্দেশ্য)।
- AoA কোম্পানির অভ্যন্তরীণ কার্যপ্রণালী নির্ধারণ করে।
- দুই ডকুমেন্টে সংঘর্ষ হলে Companies Act/সংশ্লিষ্ট আইনি ধারা প্রাধান্য পাবে।
১৯. প্র্যাকটিক্যাল টিপস—AoA তৈরির সময় কি খেয়াল করবেন
- কোম্পানির ভবিষ্যৎ প্রসার ও ব্যবসার ধরন মাথায় রেখে ফ্লেক্সিবল ধারা রাখুন।
- কঠোর ও অস্পষ্ট ধারা পরবর্তী বিরোধের কারণ হতে পারে—সহজ ও পরিমিত ভাষা ব্যবহার করুন।
- আইনি পরামর্শ গ্রহণ করুন—কোম্পানির ধরন অনুযায়ী স্থানীয় আইন মেনে AoA লিখুন।
- নিয়মিত AoA-র রিভিউ করুন; ব্যবসার পরিবর্তনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনুন।
২০. সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপ
Articles of Association হলো কোম্পানির অভ্যন্তরীণ নিয়মাবলী যা দৈনন্দিন পরিচালনা, শেয়ারহোল্ডার ও পরিচালক সম্পর্ক, সভা-সমিতি, আর্থিক নীতি, অনুমোদিত ক্ষমতা এবং লিকুইডেশন প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে। AoA ঠিকভাবে তৈরি ও মান্য করলে কোম্পানি পরিচালনায় স্বচ্ছতা, আইনগত সুরক্ষা ও স্থিতিশীলতা পাওয়া যায়।
